উচ্চ শিক্ষিত যুবক মামুন হাসান ২০১৮ সালের জুন থেকে শুরু করেন গাড়ল পালন। একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে গাড়ল পালন শুরু করেন যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বেনাপোলের এই যুব্ক। লাভজনক হওয়ায় গাড়ল পালন করে আজ স্বাবলম্বী মেহেদী হাসান। সরেজমিনে ঘুরে এবং মেহেদী হাসান ও স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গাড়ল রাজশাহী অঞ্চলের একটি ভেড়ার জাত। দেখতে সাধারণত ভেড়ার মতোই লাগে কিন্তু ভেড়া নয়, আকারেও ভেড়ার চেয়ে কিছুটা বড়। এরা লোনা পানি এলাকায় সহজে মানিয়ে নিতে পারে। এগুলো আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোটনাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে আমাদের দেশি ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এই ক্রস ব্রিডের নামকরণ করা হয় ‘গাড়ল’ (গাড়ল এবং ভেড়ার সমন্বয়ে জন্ম নেওয়াকে ক্রস ব্রিড বলা হয়েছে)। এরা সাধারণত ৭-৮ মাস পর পর একটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, কম্পিউটার প্রকৌশল বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর ঢাকার হেমায়েতপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন । পরাধীন চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামে। নিজ গ্রামে এসে গাড়ল পালন শুরু করেন মেহেদী। ২০১৮ সালের জুন মাসে বগুড়া সারিয়াকান্দি ডাপ থেকে দুটি গাড়লের বাচ্চা ১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে শুরু করেন পালন। এরপর ভারতের নাগপুর, কলিকাতা ও রাজস্থান থেকে আরও ৩৫টি গাড়ল সংগ্রহ করেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৯০ থেকে ১০০টির মতো গাড়ল ও ভেড়া।
মামুন জানান, প্রথম ক্রয় করা একটি গাড়ল চার মাস লালন-পালনের পর ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। গাড়ল পালন অত্যন্ত সহজ। এরা যেকোনও পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারে। রোগ-ব্যাধি কম হয়। বাজারে গাড়লের চাহিদাও বেশি। একটি ৩-৪ মাস বয়সী গাড়লের দাম ৫-৬ হাজার টাকা। পূর্ণবয়স্ক গাড়লের ওজন ৬০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। গাড়লের মাংসের দাম প্রতি কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। প্রতি গাড়ল এর খামার ছয় থেকে আট মাস পর পর মা গাড়ল বাচ্চা দেয়। এরা একবারে দুই-চারটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে।
বছরে চার বার কৃমির বড়ি আর দুই বার পিপিআর টিকা দিলে খামার রোগমুক্ত থাকে। উপজেলা পশুসম্পদ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে বিভিন্ন টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
মামুন হাসান আরও জানান, আগামী এক বছরে তার খামারে দুইশ থেকে তিনশ গাড়ল উৎপাদন হবে। তার খামারে তিনি ও বাড়ির লোকের বাইরেও বেতনভুক্ত দুইজন কর্মচারী রয়েছেন। গাড়ল পালন করে তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। যারা শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন, তারা সহজে গাড়লের খামার করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।